ক্ষতিপূরণের বাইরে থেকে যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় অধিকাংশ নিহতের পরিবার ও আহত ব্যক্তি। সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ চালুর পর দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ পরিবার এবং আহতের মাত্র ১ দশমিক ৪২ শতাংশ ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। যদিও সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের তহবিলে এখনো জমা আছে আড়াই’শ কোটিরও বেশি টাকা। তবে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আইন অনুসারে দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হয়। কিন্তু অনেকেই তা না জানার কারণে আবেদন করেন না। তাছাড়া ক্ষতিপূরণের আবেদন করার পর বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও টানা না পাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের উত্তরাধিকার ও আহতদের অনুকূলে আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এ তহবিল গঠন করা হয়েছে। আর ওই আইনের বিধিমালা ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। তহবিলটি একটি ট্রাস্টি বোর্ড পরিচালনা করে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেলে ভুক্তভোগী ব্যক্তির পরিবার পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাবে। আর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে তিন লাখ টাকা পাবেন ভুক্তভোগী ব্যক্তি। তাছাড়া আহত কারো চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকলে তিন লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা মিলবে। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলে এক লাখ টাকা পাবেন। দেশে সড়ক আইনের বিধিমালা কার্যকরের দিন থেকেই ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন জমা নেয়া শুরু হয়। আর বিগত ২০২৩ সালের অক্টোবরে ১৬২ জনকে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তরের মাধ্যমে শুরু হয় ক্ষতিপূরণ দেয়া।
সূত্র জানায়, বিআরটিএ কার্যালয় থেকে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ ট্রাস্টি বোর্ড পরিচালিত হয়। সেখান থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬৮টি চেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১ হাজার ৪০৫ জন নিহতের পরিবার আর আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৬৩ জন আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। সব মিলিয়ে ৭৪ কোটি ২২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। আর বিগত ২০২৩ সাল থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ হাজার ২৪৫ জন নিহত এবং ১৮ হাজার ৫৫৫ জন আহত হয়েছেন। যদিও বেসরকারি হিসাবে আরো বেশি সড়কে হতাহতের সংখ্যা। দেশের বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর সাত হাজারের বেশি মানুষ মারা যান এবং ১০ হাজারের বেশি আহত হন। আর শুধু গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দেশীয় সংস্থাগুলো হিসাব করলেও হাসপাতালে কিংবা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হিসাবে আসে না। তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ৩১ হাজার ৫৭৮ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
সূত্র আরো জানায়, সড়ক দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণ তহবিলে টাকা আছে। তাছাড়াতহবিল বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনে যানবাহন মালিকের কাছ থেকে চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোরও সুযোগ আছে। কিন্তু প্রচারের অভাবে মানুষ না জানার কারণে যথাসময়ে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেন না। আর সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে আর্থিক সহায়তা পেতে নির্ধারিত ফরমে দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। অনুসন্ধান কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিবেদন জমা দেবে। আর প্রতিবেদন দাখিলের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ড আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবে ‘প্রাপকের হিসাবে প্রদেয়’ চেকের মাধ্যমে টাকা দেবে। অর্থাৎ দুর্ঘটনার দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেয়া সম্ভব। দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের দাবি মীমাংসার জন্য রয়েছে ১২ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড। বিআরটিএর চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে বোর্ডের চেয়ারম্যান। আর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকেরা বোর্ডের সদস্য।
এদিকে ট্রাস্টি বোর্ড সংশ্লিষ্টদের মতে, তহবিলে গত আগস্ট পর্যন্ত ২৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা জমা আছে। ওই টাকা সব ধরনের যানবাহন মালিকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইনে ক্ষতিপূরণের জন্য গঠিত তহবিলের টাকা কোন কোন খাত থেকে আসবে বিধিমালায় তা বিস্তারিত বলা আছে। খাতগুলো হলো সরকারের দেয়া অনুদান, মোটরযানের মালিকের কাছ থেকে তোলা চাঁদা, সড়ক পরিবহন আইনের মাধ্যমে আদায় করা জরিমানার একটি অংশ, মালিক সমিতির অনুদান, শ্রমিক সংগঠন বা শ্রমিক ফেডারেশনের অনুদান, অন্য কোনো বৈধ উৎস থেকে পাওয়া অর্থ। বিধিমালা অনুসারে ট্রাস্টি বোর্ড তহবিলের একটি অংশ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে। ওই অর্থ দিয়ে সড়ক খাতের গবেষণার কথাও বলা হয়েছে। যদিও ট্রাস্টি বোর্ড তার কোনো কিছুই এখনো শুরু করতে পারেনি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের বিষয়টি অগ্রাধিকার হিসেবে দেয়া হয়। সেজন্য দুর্ঘটনার পরই হতাহতের বাড়িতে গিয়ে ক্ষতিপূরণের ফরম দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া জেলা প্রশাসকদেরও দ্রুত প্রতিবেদন দিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। আর মানুষকে আরো বেশি জানাতে শিগগিরই টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে ১২০টি চেক প্রস্তুত আছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
ক্ষতিপূরণের বাইরে থেকে যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় অধিকাংশ ভুক্তভোগী
- আপলোড সময় : ০৭-১১-২০২৫ ১০:০৯:২০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৭-১১-২০২৫ ১০:০৯:২০ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার